সর্বশেষ আপডেট

স্বাস্থ্য

প্রযুক্তি

ভিডিও

Wednesday 4 May 2016

স্বার্থপরতার নানা রূপ


যিনি সবসময় নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে তাকেই বলে স্বার্থপর বা সেলফিস । 

আমরা কথায় কথায় প্রায়ই একে অন্যেকে বলি স্বার্থপর। 

আমরা এ শব্দটিকে নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এটা অনেকটা গালিগালাজের পর্যায়ে ধরে নেওয়া হয়, অবশ্য ভদ্র মানুষের গালি। তবে পৃথিবীর ধ্রুব সত্য হলো মানুষ মাত্রই কম বেশি স্বার্থপর। 

শুধু কী মানুষ, প্রাণী জগতের সবাই আপন স্বার্থকেই বড় করে দেখে। মানুষ সহ প্রতিটি প্রাণীর মাঝেই ‌'সেলফিস জিন' বলে একধরণের উপাদান আছে। যা প্রাণীদের নিজের প্রতি পক্ষপাতে প্রলুব্ধ করে। নিজের সুরক্ষা আর নিরাপত্তাকেই সব প্রাণী অগ্রাধিকার দেয়। ‌এ নিয়ে হয়েছে অনেক গবেষণা। বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স স্বার্থপরতার কারণ বিশ্লেষণ করে লিখেছেন 'সেলফিস জিন' নামে একটি গ্রন্থ। এতে তিনি নানা ত্বত্ত্বের মাধ্যমে বলেছেন মনো ও শরীরবৃত্তীয় স্বার্থপরতার নানা রূপ সম্পর্কে। তার দাবী, স্বার্থপরতার জিন নিয়েই প্রতিটি প্রাণী পৃথিবীতে আসে। এই স্বার্থপরতার জিন-ই প্রাণীর অধিকাংশ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করে। বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন প্রতিটি প্রাণী নিজেকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি ভাবে। 

মানুষের ভেতরেও আছে এই ‌'সেলফিস জিন'। কাজেই কোনো মানুষই স্বার্থপরতার উর্দ্ধে নয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার মনোবিজ্ঞানীদের দাবী, স্বার্থপর হলেই নাকি সুখি হওয়া যায়। 

সব মানুষই সুখি হতে চায়। আর সুখি হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো স্বার্থপর হওয়া।যদিও আমরা জানি জানি, অন্যের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার নাম সুখ। প্রাচ্যের সেই ধারনাকে ভেঙ্গে দিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার মনোবিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, সুখি হবার জন্য স্বার্থপরতা জরুরী। অর্থাৎ আপনি যদি স্বার্থপর না হোন তাহলে সুখি হিতে পারবেন না। তবে শর্ত হল এর জন্য অপরাধবোধকে পরিহার করতে হবে। 

সম্প্রতি ডেইলি টেলিগ্রাফে এ বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যের সুবিধার জন্য কিছু করতে গিয়ে নিজে কিছুটা সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে কেউই সেটা করে না। সব মানুষই চায় পূর্ণ সুযোগটুকু নিজে একা পেতে। সে ক্ষেত্রে অন্যের ক্ষতি করতেও কেউ কেউ পিছপা হয় না। তবে সেটা নিয়ে যদি কারও মনে যতক্ষণ অপরাধবোধ দেখা না দেয়; ততক্ষণ সে কিছু অর্জনের আনন্দে বিভোর থাকে। আর এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা আত্মকেন্দ্রিকতাকে দায়ী করেন। তবে সাধারণত এমনটা ঘটলেও ব্যতিক্রম দেখা যায়। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১৬ স্নাতক শিক্ষার্থীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে এমন তথ্য দেন মনোবিজ্ঞানীরা। 

সম্প্রতি আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্বার্থপর ও আগ্রাসী মনোভাব বিশিষ্ট মানুষেরা নেতা হিসেবে অনেক বেশি সাফল্য পান। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও তাঁরা দ্রুত পদোন্নতি পান। গবেষণাটি যৌথভাবে চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেলগ স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট, স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেস এবং কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাপার স্কুল অব বিজনেস। এই গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি স্বার্থপর ও আগ্রাসী মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তিরা কম আকর্ষণীয় চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির চেয়ে নেতৃত্বে এগিয়ে থাকেন। তাঁরা পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রেও অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। স্বার্থপর ও আগ্রাসী মনোভাবকে শক্তিমত্তার প্রকাশ হিসেবে দেখা হয় বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। 

কেলগ স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের গবেষক রবার্ট লিভিংস্টোন বলেন, ‘স্বার্থপরতা মানুষের মধ্যে কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব জাগিয়ে দেয়। বিশেষ করে যখন প্রতিযোগিতার বিষয় থাকে, তখন এই মনোভাবই মানুষকে নেতা হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে।’ 

স্বার্থপরতাকে অনেকেই নেতিবাচকভাবে দেখেন । কেউ আবার এটাকে অপরাধের সমতুল্য বলে মনে করেন। অথচ জন্মের সাথে সাথেই স্বার্থপরতার জীন মানুষের সঙ্গী। আমরা সবাই স্বার্থপর বিভিন্ন ভাবে ও ক্ষেত্রে । কিন্তু বাইরে এমন একটা ভাব করি যেন দয়ার সাগর। 

জীবনে সফল হতে হলে আসলে স্বার্থপর হওয়ার প্রয়োজনও আছে। স্বার্থপর না হলে জীবনের আনন্দ থেকেই আমরা বঞ্চিত হতাম । আমাদের জীবনটাই থেমে যেত । এটা না থাকলে আমি অন্যের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম না , ভালো থাকার চেষ্টা করতাম না , ভালো থাকতেও পারতাম না । 


স্বার্থপর হওয়াটাকে তাই আমি দোষের কিছু বলে মনে করি না। সফল হওয়ার জন্য অবশ্যই এই মনোবৃত্তির প্রয়োজন আছে। তবে কিছু কিছ স্বার্থপরতা অবশ্যই এড়ানো উচিত। অন্যের ক্ষতি করে নিজের স্বার্থরক্ষা কখনোই ঠিক নয় । স্বার্থপরতা তখনই দোষের হয় যখন তা 'আমি' বা 'আমার' সীমানা পার হয়ে অন্যের স্বার্থের ক্ষতি করে । অন্যের ক্ষতি না করেও স্বার্থপর হওয়া যায় । 


স্বার্থপরতায় আসলে ভালো-মন্দ দু-দিকই আছে। নিজের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে যেখানে অন্যের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, সে রকম স্বার্থপর হতে কোনো বাঁধা নেই। আপন স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে অন্যের সর্বনাশ করা অবশ্যই অন্যায়।

Post a Comment

ওয়েব সাইট দেখার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ

 
কপিরাইট ©২০১৬ Health And Wellness Related Portal
Distributed By : মোহাম্মদ নাবিল . Powered by: প্লাস আইটি